দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করতে হবে: শিক্ষা উপদেষ্টা
ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় :
২২-১২-২০২৪ ০৮:১৬:১০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২২-১২-২০২৪ ০৮:১৬:১০ অপরাহ্ন
ছবি:সংগৃহীত
শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি, ছাত্র রাজনীতির নামে দখলদারিত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের কারণে উচ্চশিক্ষার মান ক্রমাগত অধঃপতিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি আরও বলেছেন, শিক্ষিত বেকারও আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে।
রোববার ‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বরেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা। এতে সরকার প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার প্রদর্শনসহ নানা সমস্যা বিরাজমান। কিন্তু সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা গত দেড় দশকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু হবার পথে। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা বন্ধ করতে দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করতে হবে।সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পূর্ববর্তী সময়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখানে রীতিমতো দুর্বৃত্তায়ন করা হয়েছে। সেগুলো বন্ধ করতে কাজ করছি। উপাচার্যসহ অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যদের আনা হচ্ছে।
উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় যে একটা বড় সমস্যা আছে, তা দেখা যায় কতগুলো দিকে তাকালে। একটা হলো এইচএসসি পাস করার পরই যারা মেধাবী ছাত্র, যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের কেন এত বিদেশে চলে যেতে হবে?
তিনি বলেন, যারা উচ্চশিক্ষা পাস করে বের হচ্ছে, তাদের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। শিক্ষিত বেকারের সমস্যা আমাদের এত ছিল না। এখন এটি আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে। আমরা উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছি না, সেটাও দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে। কাজেই উচ্চশিক্ষায় সমস্যা আছে, কোনো সন্দেহ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উচ্চশিক্ষার পরিবেশ বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্রমাগত অধঃপতিত হয়েছে। এর পেছনে যেসব কারণ আছে, সেগুলো সবারই জানা। এর মধ্যে আছে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন- এগুলো সবই জানি আমরা। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার পরিবেশের এত অবনতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজ নিজ বিষয়ে আন্তর্জাতিকমানের অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের গবেষক। এটা দৃষ্টিগোচর হয় না, অনেক কারণে।
উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু করণীয় বিষয়েও আলোকপাত করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ইউজিসির কর্মপরিধি বাড়িয়ে এটিকে উচ্চশিক্ষা কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নামকরণ করে কিছু কিছু নতুন কর্মপরিকল্পনা বা দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, সেটি চিন্তা করা যেতে পারে। আর শিক্ষার বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে এটি হঠাৎ করেই করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া বিদেশে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়া, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোসলেম চৌধুরী, অধ্যাপক ম. তামীম, রেজোয়ান খান, গ্রামীণ ফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, প্রাণ গ্রপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk
কমেন্ট বক্স